• পরিবার পরিকল্পনাঃ উন্নত প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে পরিকল্পিত পরিবার গঠণ অত্যন্ত জরুরি। পরিকল্পিত পরিবারের জন্য দম্পতিদের স্থায়ী-অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনার সব ধরণের পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নেয়া দরকার। • মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য পুষ্টিঃ একজন মায়ের পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত দরকার। বিশেষ করে গর্ভকালীন ও গর্ভোত্তর সময়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।কেননা একজন সুস্থ মা-ই একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারেন। শিশুর জন্মের পর থেকেই পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। এ জন্য জন্মের পরপরই শিশুকে মায়ের দুধ দেয়া, ৬মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো, এর পর শিশুকে বাড়তি খাবার দেয়া এবং এর পাশাপাশি ২ বছর পর্যন্ত বুকের দুধ চালিয়ে গেলে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব। • আরটিআই/এসটিআই ও এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণঃ যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ে আমাদের দেশের নারী-পুরুষের সঠিক জ্ঞান না থাকার ফলে বিভিন্ন ধরণের যৌন রোগের সংক্রমন ঘটে। এ ছাড়া বিষয়টি লজ্জার মনে করে সঠিক চিকিৎসাও নেয়া হয় না। তাই সঠিক সময়ে স্বামী-স্ত্রী/যৌনসঙ্গীরা একই সঙ্গে সুচিকিৎসা নিলে পরবর্তীতে এ ধরণের সংক্রমনের সুযোগ থাকে না এবং জটিলতাও সৃষ্টি হয়। • কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যাঃ বয়ঃসন্ধিকালই জীবন গঠণের উপযুক্ত সময়। তাই এ সময় থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় পর্যায়সহ জেলা পর্যায়ের সকল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। • গর্ভপাত প্রতিরোধ ও গর্ভপাতজনিত জটিলতার ব্যবস্থাপনাঃ মাতৃ-মৃত্যুর একটি প্রধান কারন হচ্ছে অনিরাপদ গর্ভপাত এবং এর জটিলতা। কাজেই প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্য অনিরাপদ গর্ভপাত রোধ করা এবং গর্ভপাত সংক্রান্ত যে কোন জটিলতায় জরুরি চিকিৎসা নেয়া একান্ত প্রয়োজন। • যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা এবং সচেতনতা, পুরুযের প্রজনন স্বাস্থ্য এরং তাঁদের অংশ গ্রহণঃ যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ে আমাদের দেশে নারী-পুরুষ উভয়েরই সঠিক ধারণা নেই। ফলে এরা সহজেই নানাবিধ ঝুঁকির সম্মুখীন হয় এবং নানা ধরণের যৌন রোগে আক্রান্ত হয়। কাজেই উভয়কেই এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সঠিক পরামর্শ গ্রহণে পুরুষদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। • স্তন ও প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারসহ অন্যান্য স্ত্রী রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণঃ মহিলাদের মৃত্যুর একটি প্রধান কারন হলো স্তন ও প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সার। এ বিষয়ে অজ্ঞতার কারনে মহিলারা সাধারণতঃ জটিলতার শেষ পর্যায়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না এবং মৃত্যুও রোধ করা যায় না। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ের সকল বিশেষায়িত হাসপাতাল, সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা পর্যায়ের সদর হাসপাতাল এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রসহ নির্বাচিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্তন ও জরায়ু মুখের ক্যান্সার পূর্বাবস্থা নির্ণয়ে স্ক্রিনিং সেবা চালু করা হয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে লজ্জা না করে ৩০বছর এবং তদোর্ধ্ব সকল মহিলাদের জরুরি ভিত্তিতে উক্ত সেবা গ্রহণ করা উচিত। • নারী ও শিশু নির্যাতনঃ নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সকলকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে। • বন্ধ্যাত্ব এবং অন্যান্য যৌন সমস্যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণঃ আমাদের দেশে বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে নানা ধরণের কুসংস্কার ও ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রতিটি নারী ও পুরুষের জন্য জরুরি। তাই বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু চিকিৎসা ও পরামর্শ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার জন্য করণীয় • নিয়মিত প্রজনন অঙ্গ পরিস্কার রাখা প্রয়োজন। • শিশুদেরকে প্রথম থেকেই প্রজনন অঙ্গের যত্ন নিতে অভ্যস্ত করা প্রয়োজন। • প্রজনন অঙ্গ যেন ভেজা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার, অন্যথায় ছত্রাক জাতীয় রোগ দেখা দিতে পারে। • প্রতিবার পায়খানা-প্রস্রাবের পর ভাল ভাবে প্রজনন অঙ্গ পরিস্কার করা দরকার। • প্রজনন অঙ্গে যে কোনো সমস্যা দেখা গেলে লজ্জা না করে দ্রুত ডাক্তার বা পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর পরামর্শ নেয়া এবং চিকিৎসা করা দরকার। • প্রতিবার যৌনমিলনের পর নারী-পুরুষ উভয়কেই যৌনাঙ্গ ভাল করে পরিস্কার করা প্রয়োজন। • নিরাপদ যৌনজীবনে অভ্যস্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ সম্পর্কে তথ্য প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে যৌনরোগ ও প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ। যৌনমিলনের মাধ্যমে যেসব সংক্রমণ বা রোগ হয় তাকে যৌনরোগ বলে। • লক্ষণ (পুরুষের ক্ষেত্রে)ঃ প্রস্রাবের রাস্তায় পুঁজ, পুরুষাঙ্গে ঘা বা ক্ষত, অন্ডকোষ ব্যথা ও ফোলা, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা, কুচকি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা ইত্যাদি। • লক্ষণ (মহিলাদের ক্ষেত্রে)ঃ যোনিপথে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, যৌনাঙ্গে ক্ষত বা ঘা, যোনিপথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া, তলপেটের দুই দিকে ব্যথা, কুচকি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা, সহবাসের সময় ব্যথা, কোন কোন ক্ষেত্রে জ্বর ইত্যাদি। • যেভাবে ছড়ায়ঃ আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে কনডম ছাড়া যৌনমিলনের মাধ্যমে, জীবানুমুক্ত সুচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার না করা, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণ করা, আক্রান্ত মা থেকে সন্তানের মাঝে, মাসিকের সময় পরিস্কার কাপড় ব্যবহার না করলে, প্রসব বা গর্ভপাতের সময় নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও এই সংক্রমণ ছড়ায়। • সংক্রমণের সম্ভাব্য জটিলতাঃ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে, সন্তান নষ্ট হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়, মৃত সন্তান জন্ম দেবার সম্ভবনা থাকে,জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হতে পারে, পুরুষের মুত্রনালী সরু হয়ে যেতে পারে। • করণীয়ঃ যৌনরোগ সন্দেহ হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর পরামর্শ নিতে হবে, অবশ্যই নিজের ও যৌনসঙ্গীর (যদি থাকে) এক সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ ক্ষেতে হবে এবং অন্যান্য বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে, প্রয়োজনে যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহা করা উচিত। |
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস